অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছেন বিশ্বের খ্রিস্টান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। একইসঙ্গে ন্যক্কারজনক এই কাণ্ডের নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ ফ্রান্সিস এই মন্তব্য করেন বলে সোমবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন পোড়ানো তাকে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়া বাক স্বাধীনতার নামে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এটি প্রত্যাখ্যানও করেছেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদপত্র আল ইত্তিহাদে এক সাক্ষাৎকারে পোপ ফ্রান্সিস এসব কথা বলেন। সোমবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, ‘পবিত্র বলে বিবেচিত যে কোনো গ্রন্থকে সম্মান করা উচিত। আমি এই ধরনের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত বোধ করি।’
বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান এই ধর্মগুরু বলেন, ‘বাক স্বাধীনতাকে কখনোই অন্যদের অবজ্ঞা বা অবমাননা করার উপায় হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয় এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়া নিন্দনীয় এবং এটিকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।’
গত বুধবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে দুই ব্যক্তি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কোরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদেকে এই ন্যক্কারজনক কাজ করার অনুমতি দেয় একটি সুইডিশ আদালত। কোরআন অবমাননা করার জন্য ওই ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিরা পবিত্র ঈদুল আজহার দিনটিকে বেছে নেয়।
ওই ঘটনার জেরে প্রতিক্রিয়া জানাতে ৫৭-সদস্য দেশের সংস্থা ওআইসি জেদ্দা সদর দপ্তরে বৈঠকে বসে এবং ভবিষ্যতে পবিত্র কোরআনের অবমাননা এড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
বৈঠকের পরে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র ‘কোরআনের অবমাননা করার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ওআইসি তার সদস্য দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার’ আহ্বান জানিয়েছে।
পরে সুইডেনে উগ্র কট্টরপন্থি সমর্থকদের ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানায় সুইডিশ সরকার। একইসঙ্গে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে ইসলামবিদ্বেষ বা মুসলিম-বিরোধী মনোভাব বলেও অভিহিত করে দেশটি।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সুইডেনের সরকার স্টকহোমের প্রধান মসজিদের বাইরে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর নিন্দা করেছে এবং এটিকে ‘ইসলামোফোবিক’ বা ইসলামবিদ্বেষ মূলক কাজ বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থের ভবিষ্যত অবমাননা এড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানোর পরে সুইডিশ সরকার এই মন্তব্য করে।
সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সুইডেনের সরকার পুরোপুরি বোঝে যে, সুইডেনে বিক্ষোভের নামে কিছু ব্যক্তির সংঘটিত ইসলামফোবিক কর্মকাণ্ড মুসলমানদের জন্য আক্রমণাত্মক হতে পারে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করি এবং এসব কাজ কোনোভাবেই সুইডিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না।’
ভবিষ্যতে পবিত্র কোরআনের অবমাননা এড়াতে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) থেকে সম্মিলিত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানের পর সুইডিশ সরকারের পক্ষ থেকে এই নিন্দা করা হয়।
সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ‘কোরআন বা অন্য কোনো পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানো খুবই আপত্তিকর ও অসম্মানজনক কাজ এবং স্পষ্ট উস্কানি। বর্ণবাদ, জেনোফোবিয়া এবং এই ধরনের অসহিষ্ণুতার কোনো স্থান সুইডেন বা ইউরোপে নেই।’
Leave a Reply